October 26, 2024, 12:22 am
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতার এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়াও র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যা ঘটনার দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করে র্যাব সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ১৬ মে ২০২৩ তারিখ (মঙ্গলবার) আনুমানিক ১০৩০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানাধীন মধুখালী বালুর মাঠ থেকে অজ্ঞাতনামা শিশুর (০৮) এর মৃতদেহ উদ্ধার করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। পরবর্তীতে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ শিশুটির লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসাপাতালে প্রেরণ করে। ইতিমধ্যে শিশুটির লাশের ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হলে একই দিন আনুমানিক ১৫০০ ঘটিকায় ফেসবুকের মাধ্যমে শিশুর পিতা মোঃ ফিরোজ আলম মাসুম শিশুটির ছবি দেখে তার ছেলে মোঃ ইয়ামিন (০৮) এর মৃতদেহ সনাক্ত করে। ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে নারায়ণঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে, যার নম্বর-৫৩ তারিখ ১৭/০৫/২০২৩, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব-১ তাৎক্ষনিকভাবে এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনা উম্মোচনের জন্য ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আসামী গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, গত ০৩/১১/২০২১ তারিখ ভিকটিম মোঃ ইয়ামিন (৮) এর মাতা আমেনা বেগম ভিকটিমের পিতা মোঃ ফিরোজ আলম মাসুম (৩৪)’কে ডিভোর্স প্রদান করে। ভিকটিমের মাতা আমেনা বেগম ভিকটিম মোঃ ইয়ামিন (৮)’কে নিয়ে ধৃত আসামী মোঃ ফরিদ (৪০) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার করতে থাকে। বিবাহের পর হতে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল এবং প্রায় সময় ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। এক পর্যায়ে ভিকটিমের মাতা আমেনা বেগম আসামী ফরিদকে ডিভোর্স প্রদান করে। ধৃত আসামী ফরিদ ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুটির মাকে শায়েস্তা করার জন্য শিশুটিকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। গত ১৫/০৫/২০২৩ ইং তারিখ (সোমবার) সকাল আনুমানিক ১১০০ ঘটিকায় রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকা হতে শিশু ভিকটিম মোঃ ইয়ামিন (৮) নিখোঁজ হয়। ভিকটিমের মাতা বিভিন্ন জায়গায় ভিকটিমকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ডিএমপি, বাড্ডা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করে, যার জিডি নাম্বার-১১৩০ তারিখ ১৫/০৫/২০২৩ ইং।
এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ১৯ মে ২০২৩ তারিখ আনুমানিক বিকাল ১৫৪৫ ঘটিকায় র্যাব-১ এর আভিযানিক দল বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএমপি ঢাকা’র গুলশান থানাধীন নর্দ্দা বাজার গুলশান-২ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী মোঃ ফরিদ (৩৬), পিতা- মজনু হক, মাতা- ফাতেমা বেগম, সাং- সারপুকুর, থানা- আদিতমারী, জেলা-লালমনিরহাট, বর্তমান ঠিকানা- সাং- আনন্দ নগর (ঝিলপাড় কলোনী), থানা- বাড্ডা, ডিএমপি, ঢাকা’কে গ্রেফতার করে। ধৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম মোঃ ইয়ামিন (৮)’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে মর্মে স্বীকার করে।
ধৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, সে গত ১৫/০৫/২০২৩ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১০০ ঘটিকায় মেরুল বাড্ডা এলাকা হতে একটি সিএনজিযোগে ভিকটিম ইয়ামিন (৮)’কে নিয়ে বিভিন্ন জায়গা বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিম’কে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানো শেষে একই তারিখ আনুমানিক ১৯০০ ঘটিকায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানাধীন মধুখালী বালুর মাঠে ভিকটিমের গলায় তার কাছে থাকা কাপড়ের টুকরা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।